গৃহ বিষয়ে

নগরপ্রাকারে বসতি স্থাপনের আগে তোমাদের কল্পনার নিকুঞ্জবনে তোমরা এক বাড়ি বানাও।
গোধূলিলগ্নে তোমরা যেমন নীড়ে আসো, প্রত্যন্ত একান্তে চিরবাসী তোমাদের আত্মভূত পরিব্রাজক সে তেমনই ফিরে আসে আপন আবাসে, তোমরা যেন বিষ্মৃত না হও।
তোমাদের বৃহত্তর দেহভূমই তোমাদের আবাস, সেখানেই তোমরা চিরবাসী হও।
দিবসসূর্য্যের প্রতাপে তা বেড়ে ওঠে আর নিথর রাত্রিনিশীথে নিদ্রাগত হয়, সেই রাত্রিনিশীথ কখনও স্বপ্নহীন নয়। তোমাদের দেহনিবাস কি স্বপ্ন দেখে না? এবং স্বপ্ন দেখতে দেখতে নগর ছাড়িয়ে নিকুঞ্জবনে পর্ব্বতচূড়ায় কি হ’য়ে যায় না উধাও?

তোমাদের ঘরবাড়ি সব যদি আমার হাতের মুঠোয় কব্জা করতে পারতাম তবে সেসব আমি বীজবপকের মত বনজঙ্গলে মাঠেঘাটে ছড়িয়ে দিতাম, এমন যদি হ’ত কখনও
তোমাদের উপত্যকাগুলো যদি হ’ত তোমাদের চলার পথ আর সবুজ ঘাসঘাসালি হ’ত তোমাদের চলার পথের অলিগলি তবে তোমরা এক অপরকে খুঁজে বেড়াতে আঙুরক্ষেতে আর তোমাদের পোশাক থেকে ছড়িয়ে পড়ত মাটির সোঁদালো গন্ধ, এমন যদি হ’ত কখনও
কিন্তু এমন তো হয় না কখনও।
তোমাদের পূর্ব্বপুরুষগণ কোন অজানা আশঙ্কায় তোমাদেরকে একসঙ্গে বড় কাছাকাছি করে রেখে গেছেন। সেই আশঙ্কা রয়ে যাবে আরও কিছুকাল, আরও কিছুকাল মাঠপ্রান্তর থেকে তোমাদের উনানচুল্লীকে দূর করে রাখবে এই নগরপ্রাকার, আরও কিছুকাল এখনও।

তোমাদের এই ঘরবাড়িতে এমন কী আছে, হে অরফালিজবাসীগণ, তোমরা আমাকে বল। কী সেই জিনিষ তোমরা দুয়ার অর্গলবদ্ধ করে পাহারা দাও?
তোমাদের কি শান্তিস্বস্তি আছে, আছে কি সেই পরম প্রেরণা যাতে তোমরা তোমাদের অন্তর্গত ক্ষমতার সায় পাও?
তোমাদের কি এমন স্মৃতি আছে যে তার প্রোজ্জ্বল খিলান তোমাদের চিত্তগম্বুজকে ব্যাপ্ত করে রাখে সর্ব্বময়?
তোমাদের কি এমন সৌন্দর্য্য আছে যে তা তোমাদের হৃদয়কে কাষ্ঠপ্রস্তরময় বস্তু থেকে পবিত্র পাহাড়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় সবসময়?
আমাকে বল, সত্যই কি এইসব কিছু আছে তোমাদের ঘরবাড়ির আবাসময়?
না কি শুধুই আরাম-আয়াস লালসাবিলাস নিশীথের অতিথির সাজে গৃহকর্তার মত গৃহে প্রবেশ এবং তারপর তার প্রভুর প্রভুত্বে প্রভাস?
হ্যাঁ, তারপর হয়ে ওঠে সে পোষকর্তা, কাঁটাচাবুকের কষায় পোষ মানিয়ে তোমাদের বৃহত্তর কামনা-বাসনার করে পুতুলনাচ অন্তর্নাশ।
কোমল পশম হাত তার, হৃদয় লৌহ কঠিন
তোমাদের ঘুমপাড়ানি গান শুনিয়ে সে শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে উপহাসে তোমাদের অস্থিমজ্জার জীবনকে করে কৌলিন্যহীণ।
তোমাদের দৃঢ় বিশ্বাসকে অবহেলায় ঠুনকো ভাঁড়ের মত নিক্ষেপ করে কাঁটাজঙ্গলে।
তোমাদের আরাম-আয়াস লালসাবিলাস প্রকৃতই তোমাদের আবেগঘন অন্তরাত্মাকে হনন করে আর হাসতে হাসতে সামিল হয় তার অন্ত্যেষ্টির অন্তঃসলিলে।
অসীম অনন্তের সন্তান তোমরা, অস্থৈর্য্যেও ধীরস্থির তোমরা কখনই তার ফাঁসবন্দী হবে না, কখনই তার বশ্যতার শিকার হবে না
তোমাদের ঘরবাড়ি হবে মাস্তুলের মত, কখনই তা বন্দরে নোঙর ফেলবে না
তোমাদের ঘরবাড়ি হবে নেত্ররক্ষার নেত্রপল্লব, দেহক্ষত ঢাকার দ্যুতিময় ঝিল্লি হবে না
দরজায় ঢোকার সময় তোমাদের ডানা গোটাবে না তোমরা কিংবা ছাদে মাথা ঠুকলেও তোমরা মাথা নত করবে না, দেওয়াল ফেটে চৌচির হ’য়ে যায় যাক্ তবুও ভয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করবে না
তোমাদের পূর্ব্বপুরুষেরা জীবিতদের জন্য যে সমাধিক্ষেত্র বানিয়ে রেখে গেছে তোমরা সেখানে বাস করবে না
এবং তোমাদের ঘরবাড়ি যতই শোভনসুন্দর হর্ম্মসৌধ হউক্ সেখানে কোন গোপনীয়তা থাকবে না কিংবা তোমাদের কোন কামনা-বাসনা।
তোমাদের মধ্যে যা অসীম অনন্ত মহাকাশ সৌধে তার বাস, দরজা খোলা তার ভোরের কুয়াশায়, বাতায়ন তার রাত্রির নৈঃশব্দ আর সঙ্গীতের বন্দনা।

সংকলিত

Philosophy-sm 

থেকে

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Free Website TemplatesFreethemes4all.comFree CSS TemplatesFree Joomla TemplatesFree Blogger TemplatesFree Wordpress ThemesFree Wordpress Themes TemplatesFree CSS Templates dreamweaverSEO Design