দ্য প্রফেট-০১

এইসব বলল সে। না বলা যে রয়ে গেল অনেক কিছুই
হায়! কিছুতেই বলা হ’ল না তার অন্তরাত্মার গভীর গোপন অনেক কিছুই।

যখন প্রবেশ করল সে নগরে
তার দর্শনলাভের ব্যাকুলতায় আবালবৃদ্ধবণিতার আকুল আহ্বান ধ্বনিত হ’ল সমস্বরে।
নগর জনপদবাসী বয়োজ্যেষ্ঠজনরা এগিয়ে এল তার সম্মুখে, তার উদ্দেশ্যে বলল:


তুমি এখনই ছেড়ে চলে যাবে না আমাদের, তুমি বল
তুমি সায়াহ্ণকালের মধ্যাহ্ণজোয়ার, তোমার জীবনযৌবনই স্বপ্ন দান করেছে স্বপ্নদর্শনের আমাদের
তুমি অনাত্মীয় নও অজ্ঞাত অতিথিও নও, তুমি পুত্র তুমি প্রিয়তম আমাদের
তুমি আমাদের চোখের জলে ভাসিয়ে যেও না, তোমারই মুখদর্শনের ক্ষুধার্ততা যে আমাদের।

এবং যাজক যাজিকারা তার উদ্দেশ্যে বলল:
আমাদের যেন বিচ্ছিন্ন না করে সমুদ্রের এই তুফানতরঙ্গ। জীবনভোর সম্বৎসরকাল কাটিয়েছ আমাদের মাঝে তুমি, তার স্মৃতি যেন স্মরণে বিস্মরণে রয়ে যায় অমলিন, তুমি বল
আমাদের মধ্যে হেঁটে বেড়িয়েছ তুমি তোমার সর্ব্বাত্মায়
আমাদের মুখাবয়ব উজ্জ্বল উচ্ছল আলোকিত হয়েছে তোমার প্রপতিত সেই ছায়া উপচ্ছায়ায়।
কত ভালোবেসেছি আমরা তোমাকে নির্ব্বাক নির্ভাষ ভালোবাসার উপচার অবগুন্ঠনে
এখন তা চিৎকৃত রোদনে বিলাপ করছে তোমার সম্মুখে নিরাবৃত অনবগুন্ঠনে
বিচ্ছেদক্ষণেই কি ভালোবাসা অতলান্ত গভীরতায় বিদিত হয় চিরন্তন,
অলোখনিরঞ্জন কি সেই ভালোবাসা মন্থন?
এবং আরও কতশত জন এল বিনতি করল তাকে। নিরুত্তর রইল সে কোন জবাব এল না তার কাছ থেকে। শুধু সে আনত করল মস্তক তার, সম্মুখে যারা যারা দাঁড়িয়েছিল তারা শুধু লক্ষ্য করল বক্ষ বেয়ে তার প্রবহমান অশ্রুধারা।
সে এবং সমুদয় মানুষজন অগ্রসর হ’ল দেবালয় চত্বরের দিকে, জনে জনে তারা।

এবং উপাসনার অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে এল রমণী আল্ মিৎরা, সে ভবিষ্যবাদিনী
পরম করুণার দৃষ্টিতে তার পানে তাকিয়ে দেখল সে। সে-ই প্রথম পরম প্রার্থিতা, নগরের প্রথম দিন থেকেই সে তার একান্ত অনুগামী, সে পরম সম্ভাষিণী
সম্ভাষণ করে সে বলল:

হে পরমপিতার প্রাণিত দরবেশ! সর্ব্বোচ্চ ও সর্ব্বোত্তমের সন্ধানী, জানি জাহাজের প্রতীক্ষায় তুমি কত দীর্ঘ দূরত্ব পাড় হ’য়ে এসেছ কত দীর্ঘকাল হ’ল
তোমার সেই জাহাজ আজ ভিড়েছে বন্দরে, তোমাকে যেতেই হবে এবার
দেশকালের স্মৃতি ও মহোত্তর অভিলাষের কাঙ্খিত আবাসভূমির আকাঙ্খা তোমার, আমাদের প্রতি নির্বিকল্প ভালোবাসা তোমার তোমাকে বেঁধে রাখতে পারবে না আর, তোমাকে বেঁধে রাখতে পারবে না আমাদের প্রয়োজনের তাগিদ, তোমাকে যেতেই হবে এবার।
বিদায় ক্ষণে আমাদের প্রার্থনা তাই তুমি ব্যক্ত ও বিদিত কর তোমার উপলদ্ধ সত্য সন্দর্শন, আমাদের জন্য রেখে যাও তা তুমি
আমরা আমাদের সন্তানসন্ততিদের জন্য রেখে যাব, তারা তাদের সন্তানসন্তদিদের জন্য রেখে যাবে তোমার সেই অমর অক্ষর সন্দর্ভ, আমাদের জন্য রেখে যাও তুমি।
আমাদের দিবসরাত্র প্রত্যুতমান তোমার নিভৃত একাকীত্বে, তোমার জাগরণে তুমি শুনেছ আমাদের নিদ্রাঘাত হাসিকান্নার তরঙ্গ নিস্তরঙ্গ
এখন ব্যক্ত কর জীবনমৃত্যুর যা কিছু যত কিছু অভিজ্ঞাত হয়েছ তুমি আমাদের কাছে, তুমি জীবন রণরঙ্গ।
জবাবে বলল সে:
হে অর্ফালিজবাসীগণ! তোমাদের নিবিষ্ট আত্মায় যে সংলাপ ছড়িয়ে আছে তা ছাড়া আর কী-ই বা আমি ব্যক্ত করতে পারি নির্বিশেষে?
তারপর আল্ মিৎরা বলল তাকে, তুমি আমাদের ভালোবাসার কথা বল, ভালাবাসার সেই ভাবমন্ত্র অনুস্বরে।
তার মস্তক উন্নত করল সে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল জনসঙ্গমে, নিরুচ্চার্য্য নীরবতায় আচ্ছন্ন হ’ল তারা। এবং বলল সে মন্দ্রিত কন্ঠস্বরে:
সূত্র: সামহোয়ারইনব্লগ.কম

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Free Website TemplatesFreethemes4all.comFree CSS TemplatesFree Joomla TemplatesFree Blogger TemplatesFree Wordpress ThemesFree Wordpress Themes TemplatesFree CSS Templates dreamweaverSEO Design